প্রকাশিত: Mon, Jun 3, 2024 3:05 PM
আপডেট: Wed, Feb 5, 2025 11:58 AM

তত্ত্ব মেনে সাহিত্য রচনা করতে যান গৌণ লেখক

জাকির তালুকদার

অনেক বছর সাহিত্যের মধ্যে আছি। পুরোপুরি নিমগ্ন অবস্থাতেই আছি। বলতে পারি সাহিত্য সম্পর্কে নিজের বোধ তৈরি হয়েছে। তাই সাহিত্য সম্পর্কে কিছু লিখতে বা বলতে গিয়ে কোনো মহাজনের উক্তিকে সাক্ষী হিসাবে হাজির করার দরকার পড়ে না। কারো কোটেশন দরকার পড়ে না। বাংলাদেশ, ভারত, ইউরোপ, আমেরিকা, লাতিন, আফ্রিকার সাহিত্য পড়েছি সাধ্যমতো। বাকি জীবনেও পড়ব। তবে স্বাভাবিকভাবেই সবচেয়ে বেশি পড়েছি বাংলাসাহিত্য। আমাদের আধুনিক সাহিত্য ইউরোপ থেকে ঋণ করেছে অনস্বীকার্য। কিন্তু আমাদের বড় লেখকরা ইউরোপীয় সাহিত্যের ওপর শুধু দাগা বুলাননি। সাথে বাংলার সমাজ-সংস্কৃতির সম্পৃক্তি ঘটিয়েছেন। ফলে তাদের রচনা হয়েছে বাংলার নিজস্ব সাহিত্য। তুলনায় বলা যায় রুশ সাহিত্যের কথা। স্বর্ণযুগের রুশ লেখকরা নিজেরা কোনো সাহিত্য তত্ত্ব বা অবয়ব নির্মাণ করেননি। তারা ইউরোপ, বিশেষত ফরাসি সাহিত্যের উদ্ভাবিত ধারাটিকেই গ্রহণ করে সাথে রুশ আত্মাকে মিশিয়ে এমন সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন যা খোদ ফরাসি-ইউরোপীয় সাহিত্যের চাইতে উন্নত। 

এভাবেই এসে যায় সাহিত্য তাত্ত্বিক আর মৌলিক সাহিত্যিকের ফারাক। সৃজনশীল লেখক সবসময় এগিয়ে থাকেন। তাদের রচনাকে ব্যাখ্যা ও ব্যবচ্ছেদ করার জন্য সাহিত্য তাত্ত্বিককে তত্ত্বের আশ্রয় নিতে হয়। কখনো কখনো নতুন সাহিত্যতত্ত্বও নির্মাণ করতে হয়। তত্ত্ব মেনে সাহিত্য রচনা করতে যান গৌণ লেখক। বড় লেখক জানার জন্য তত্ত্ব জানেন। কিন্তু লেখার সময় তত্ত্বের ধার ধারেন না। 

এইভাবে যেমন বড় লেখক এবং গৌণ লেখক চেনা যায়, তেমনই জীবিতকালেই বোঝা যায় কোন কোন রচনা ভবিষ্যতের সচেতন পাঠক পড়বেন, আর কারা জীবিত অবস্থাতেই মৃত সাহিত্যের স্রষ্টা। 

অনেক লেখক আছেন যারা ৩০-৪০-৫০ বছর ধরে লিখে যান, ছোট-বড় অনেক পুরস্কার পান, একাডেমি-একুশে পদকও পান, বছর বছর বই বের হয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অতিথিও হন, কিন্তু তারা আদতে জীবন্মৃত লেখক। কারণ কী? কারণ তাদের রচনা গতানুগতিক, কোনো গভীর চিন্তা নেই, আঙ্গিকে নেই কোনো দ্যুতি, শব্দভাণ্ডার শোচনীয়ভাবে কম। সচেতন পাঠক মহল, এবং লিখতে আসা কমিটেড নতুন লেখকদের আড্ডায় কখনো তাদের নাম উচ্চারিত হয় না। অর্থাৎ জীবিত ও সক্রিয় অবস্থাতেই তারা বাংলাদেশের সাহিত্যে অপ্রয়োজনীয় বলে গণ্য। সমকালে আলোচিত হননি, মৃত্যুর পরে খ্যাতিমান হয়েছেন, এমন লেখকের কথা জানা নেই। এই প্রসঙ্গে চট করে অনেকেই জীবনানন্দের নাম বলবেন। তাদের বলি, জীবনানন্দ তাঁর জীবনকালেই আলোচিত ছিলেন। খুব গভীরভাবে আলোচিত ছিলেন। লেখক: কথাসাহিত্যিক। ২-৬-২৪। ফেসবুক থেকে